প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ছোট্ট সোনামনিরা নতুন বছরে নতুন বই পেতে যাচ্ছে। নতুন বই হাতে পাওয়ার অনন্দটাই আলাদা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাওয়া —এ একটা আলাদা অনুভূতি। বৃহস্পতিবার (৩০ডিসেম্বর ) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে প্রথমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেন। এরপর শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের হাতে বই হস্তান্তর করেন। পরে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তারাও যেন পিছিয়ে না থাকে এ জন্য আমরা ব্রেইল পদ্ধতিতে বই তৈরি করে দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদেরও তাদের নিজেদের ভাষায় বই তৈরি করে দিচ্ছি। এ রকম ৫টি ভাষায় আমরা বই তৈরি করে দিয়েছি। যাতে তারা তাদের ভাষাটা ভুলে না যায়। তিনি বলেন, করোনার কারণে আমরা বই উৎসব করতে পারছি না, কিন্তু বছরের শুরুতেই বই বিতরণ করছি। গতবারও করোনার কারণে উৎসব করতে না পরলেও বই ঠিকই পৌঁছে দিয়েছি। তাছাড়া সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা নিতে ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে তারা যেন পিছিয়ে না থাকে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করার সময় এই অনুষ্ঠান করছি। যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি, বাঙালি জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় পেয়েছি, বাংলাদেশ নামক একটা দেশ পেয়েছি। তাকেই ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে হত্য করা হয়। একই দিনে আমরা মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, আমার তিন ভাই, সেইসঙ্গে আমার পরিবারের অনেক সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান আমলে একসময় মানুষের শিক্ষার সুযোগ ছিল না। আমাদের মাতৃভাষার অধিকার পর্যন্ত তারা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। যখন আমাদের ভাষা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তখন বঙ্গবন্ধু আন্দোলন করেন। তিনি কারাবরণও করেন। মানুষ যতে উন্নত জীবন পায়, শিক্ষা পায়, এ জন্য তিনি কাজ করে গেছেন।
সরকার প্রধান বলেন, যুদ্ধপরবর্তী একটি বিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি বিনামূল্য পাঠ্যপুস্তক বিতরণ এবং শিক্ষার্থীদের কাপড় বিতরণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে কম্পূর্ণভাবে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেন। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায়ও গুরুত্ব দেন। বিজ্ঞানী ড. কুদরাত-এ খুদাকে প্রধান করে একটি কমিশিন গঠন করে দেন। যেন একটা উন্নত শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। কিন্তু তিনি তা বস্তবায়নের সুযোগ পাননি। তাকে হত্যা করা হলো। পরে যারা সরকারে আসে তারা আর এটি এগিয়ে নিতে পারিনি। ২১ বছর এভাবে চলতে থাকে। ২১ বছর পর সরকারে এসে আমরা আবার শিক্ষা কমিশন গঠন করি এবং ভকেশনাল ও বিজ্ঞান শিক্ষাকে গুরুত্ব দিই।
উল্লেখ্য, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। তবে এ বছর একদিনে সব শিক্ষার্থীকে বই দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীরা নতুন বই পাবে।
এর আগে, একই অনুষ্ঠানে চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ফলাফল গ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।