মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নস্থ কুচাইটল এলাকার ‘শিশু হাতি’ ‘হাদানি’ নামক প্রাচীন পদ্ধতিতে বন্য হাতিকে পোষ মানানোর প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালতের বিচারক মুহাম্মদ আলী আহসানের নজরে আসে। তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে প্রশিক্ষণের নামে হাতির উপর চালিত অমানবিক ওনিষ্টুর আচরণ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের আদেশ দেন এবং আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে প্রচারিত ঘটনার বিষয়ে সরেজমিনে বিস্তারিত তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেন।
সোমবার (৭ ফেব্রয়ারি) দুপুরে পরিবেশ সংক্রান্ত ন্যায় বিচার (Environment Justice) প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে The Code of Criminal Procedure ১৮৯৮ এর ২৫ ধারার ক্ষমতাবলে মৌলভীবাজার জেলার জাস্টিস অব্ দি পিস হিসেবে এই আদেশ জারী করা হয়। জুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এর রেজাউল করিম চৌধুরীকে এ আদেশে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
গত ২৪ জানুয়ারি হাতির বাচ্চা প্রশিক্ষণের নির্মমতার একটি ভিডিও ইউটিউভে দেখার পর বেশ কিছু গণমাধ্যমে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদ প্রকাশের পর দিন বন বিভাগের কর্মকর্তারা হাতির বর্তমান দায়িত্বে থাকা জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসুম রেজাকে বলেন, কোনো ধরনের নির্যাতন ছাড়া স্বাভাবিকভাবে হাতিকে প্রশিক্ষণ দিতে। তাদের উপস্থিতিতে ‘শিশু হাতি’ প্রশিক্ষণে নির্জাতনের চিএটি বন্ধ হলেও তারা চলে গেলে আবার তা শুরু হয়। এসময় প্রশিক্ষক আকবর আলী জানান, এই প্রশিক্ষণের ‘সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়। হাতিকে পোষ মানানোর এ কাজটি না করলে হাতিটি জংলি হাতির মতো আচরণ করবে। মানুষের জান-মালের ক্ষতি করবে।
জানা যায়, ‘শিশু হাতি’ প্রশিক্ষণ (হাদানি) নামক প্রচীণ পদ্ধতিতে বন্য হাতিকে পোষ মানানো হয়। প্রশিক্ষণ অবস্থায় দড়ি দিয়ে বেঁধে গাছের খুঁটির সাথে তাকে আবদ্ধ করা হয়। এসময় শিশু হাতির মাকে দূরে রাখা হয়, নির্দয়ভাবে শিশু হাতিকে শারীরিক নির্যাতন করা হয় এবং যথেষ্ট খাদ্য প্রদান করা হয় না। বর্ণিতভাবে ২ মাস প্রশিক্ষণ দেয়ার পর সার্কাসে বিভিন্ন কসরৎ এবং গাছ পালা পরিবহনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, পোষা হাতিকে প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার কিন্তু প্রশিক্ষণকালে তাকে নির্যাতন করা যাবে না। মালিকরা লাইসেন্স নিয়েই হাতি পোষেন। তারা হাতি বশে আনার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে পারেন। তবে নির্যাতনের বিষয়টি দুঃখজনক।