মৌলভীবাজারে গেল বছর জুড়ে ধানের ফলন ও বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় চলতি মৌসুমে ব্যাপকভাবে বোরো আবাদে নেমেছেন এ জেলোর কৃষকরা। বোরো চাষাবাদকে ঘিরে চারদিকে মাঠে মাঠে চলছে চারা রোপনের শেষপর্যায়ের কাজ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলন ও ধানের ন্যায্য দাম পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। আর শেষ পর্যন্ত সব ঠিক থাকলে এ বছর বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করছে কৃষি বিভাগ।
এ জেলায় বসবাসকারী বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার একমাত্র উপায় কৃষিকাজ। উৎপাদিত ফসলের কাঙ্খিত দাম পাওয়া না পাওয়ার উপরই নির্ভর করে তাদের ভাল থাকা মন্দ থাকা, সন্তানের লেখাপড়া ইত্যাদি। সাম্প্রতিক বছরে ধানে ন্যায্য দাম পাওয়ার ফলে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিক নির্ভর হয়ে ধান চাষে নিরুৎসাহী মনোভাব কাটিয়ে নব উদ্যোমে ভালো লাভের আশায় বোরো চাষে মেতে উঠেছে এখানকার কৃষি নির্ভর মানুষ। গেল বছরের চেয়ে এ বছর অনেকেই বেশী জমিতে বোরো আবাদ করছেন। জেলার বিভিন্ন স্থানে বোরো আবাদে চাষীরা জমিতে চারা লাগানো নিয়ে সকাল সন্ধ্যা ব্যস্ত সময় পার করছেন মাঠে মাঠে। এছাড়াও উৎপাদন খরচ কমাতে অনেক স্থানে আধুনিকায়ন পদ্ধতিতে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের (যন্ত্রের সাহাযে) মাধ্যমে অনেকে বোরো রোপন করছেন।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার স্থানীয় কৃষক ও খামারী সৈয়দ উমেদ আলী বলেন, গত বছর ৪০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন, ভালো ফলন ও বাজারে ধানের দাম ভাল পাওয়ায় এবার ৮০ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করছেন। তাঁর জমিতে ব্রি ধান ৮৯, ৯২ ও হাইব্রিড জাতের ধানীগোল্ড, সিনজেন্টার ১২০৩ ধান চাষ করছেন। রাইস ট্রান্সপান্টারের মাধ্যমে প্রায় ৪৫ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক ভাবে তিনি ২০-৩০ দিনের চারা রোপন করেছেন। তিনি বলেন, এতে করে শ্রমিক কম লাগায় উৎপাদন খরচ কমে যাবে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর ৫৬ হাজার ৮শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৩৭৭ হেক্টর বেশী। ইতিমধ্যে এ জেলায় ৯০ ভাগ চারা রোপণের কাজ শেষ হয়েছে। তিনি জানান এ অঞ্চলে শ্রমিকের সংকটে উৎপাদন খরছ কমাতে কৃষি বিভাগ ভর্তুকি মূল্যে অনেক স্থানে রাইস ট্রান্সপান্টার অর্থাৎ যন্ত্রের সাহায্যে চারা রোপনের যন্ত্র দিয়েছে। এর সাহায্যে কৃষকরা ১ বিঘা জমিতে মাত্র ৫‘শ টাকা খরচে চারা লাগাতে পারেন , যেখানে হাতে চারা লাগাতে ১ বিঘা জমিতে তাদের খরচ পরে প্রায় ২০০০ টাকা । তিনি জানান সরকারের এমন উদ্যোগের কারণে কৃষকরা ধানে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন। তাই মুনাফার আশায় এবার তারা বেশি আবাদ করছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী আবাদ হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
এ এলাকার স্থানীয় কৃষকরা এখন বোরো আবাদে ভালো ফলন পাওয়ার স্বপ্ন বুনছেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে এবছরও ভালো ফলন হবে, আর ধানের ন্যায্যমূল্য পেয়ে মুখে ফুটবে হাসি এমন প্রত্যাশা তাদের।