চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারিত হওয়ায় মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানে পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই জেলার বাগানগুলোতে কাজে যোগ দিয়ে চা শ্রমিকরা পাতা উত্তোলন শুরু করলে আবারও প্রাণ ফিরে পায় জেলার চা বাগানগুলো। চা বাগান মালিক পক্ষও স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন।
আগে জানানো হয়েছিল, রবিবার থেকে কাজে ফিরবেন চা শ্রমিকরা; কিন্তু চা বাগানে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আরও একদিন পর চায়ের জগতে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালীঘাট চা বাগান, রাজঘাট চা বাগান,দেওছড়া, আলীনগর,খেজুরিছড়া,পাত্রখোলা, মৃর্ত্তিঙ্গা, শমশেরনগর, কানিহাটি চা বাগানসহ জেলার ৯২টি চা বাগানেই শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। তবে আন্দোলনের টানা ১৯ দিন চা পাতা না তোলায় চাগাছ গুলো বেশ বড় ও শক্ত হয়ে গেছে। তাই সব পাতা তোলা যাচ্ছেনা। শ্রমিকরা যে পাতাগুলো তুলা সম্ভব তাই আগে উত্তোলন করে কারখানায় পাঠাচ্ছেন।
নারী চা শ্রমিক রওসন রিকিয়াশন জানান, এতদিন পরে বাগানে ফিরে খুব ভাল লাগছে। তবে খুব কষ্ট হচ্ছে পাতার অবস্থা দেখে। যে পাতাগুলো আড়াই কুড়ি হলে তোলা হয় সেগুলো ২০ থেকে ২২ কুড়ি হয়ে গেছে। বয়স বেশি হয়ে যাওয়া পাতাগুলো ফেলে দিতে হবে। খানিকটা আবেগতাড়িত হয়ে বললেন, ‘চা পাতার সঙ্গে আমাদের ভালবাসা জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের চা শিল্প টিকিয়ে রাখাটা জরুরি। যেহেতু এখন চায়ের ভরা মৌসুম, তাই আমরা একটু কষ্ট হলেও দ্রুত পাতা উত্তোলনের চেষ্টা করবো।প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ, তিনি উদ্যোগ না নিলে আন্দোলন শেষ হতো না।’
কালীঘাট চা বাগানের পঞ্চায়েত সভাপতি অভান তাঁতী জানান, ‘আমরা আন্দোলন চলাকালে কারও কথায় বিশ্বাস করিনি। প্রধানমন্ত্রীর দিকেই তাকিয়ে রয়েছিলাম। তিনিও আমাদেরকে নিরাশ করেননি।’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, প্রধামন্ত্রীর ঘোষণার পর তার সম্মানে রবিবার কয়েকটি বাগানে কিছু চা শ্রমিক কাজে নেমেছিলেন। সোমবার দেশের প্রতিটি চা বাগানে পুরোদমে কাজ চলছে।
প্রসঙ্গত, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে ১৩ আগস্ট থেকে সিলেট ভ্যালির ২৩টি, হবিগঞ্জের ২৪টি এবং মৌলভীবাজারের ৯২টি বাগানসহ দেশের মোট ২৪১টি চা বাগানের শ্রমিকরা একযোগে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির আন্দোলন শুরু করেন। দাবি আদায়ে এর আগে ৯ আগস্ট থেকে সব চা বাগানে টানা চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হয়। কিন্তু এতে সাড়া না মেলায় পরবর্তীতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন চা শ্রমিকরা। পরে ১৯ আগস্ট রাতে মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৫ টাকা করার বিষয়ে একটি চুক্তি হলেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যান শ্রমিকরা। কয়েক দফা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক হলেও এ সমস্যার সমাধান হয়নি। মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে থাকা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করতে থাকেন। অবশেষে প্রধানমন্ত্রী তাদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দিলে কাজে ফেরেন তারা।