প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের চা শিল্পকে রক্ষার জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে। চা শিল্প যেন ধ্বংস না হয় সেদিকে চা বাগান মালিক এবং চা শ্রমিকদেরকেও খেয়াল রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা আশ্বাস দিয়েছেন, দেশে কেউ গৃহহীন থাকবেনা। চা শ্রমিকরাও এ দেশের নাগরিক। তাই তাদেরকেও ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে এবং তারা ভূমির অধিকারও পাবেন।
শনিবার বিকেলে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে মৌলভীবাজার,সিলেট,হবিগঞ্জ ও চট্টগ্রাম এই ৪ জেলার চা-শ্রমিকদের সাথে সরাসরি মতবিনিময়কালে একথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে মৌলভীবাজার জেলার বিপুল সংখ্যক চা শ্রমিক কমলগঞ্জ উপজেলাধীন পাত্রখোলা চা বাগানে সমবেত হয় । সংযুক্ত চার জেলার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সর্বপ্রথম মৌলভীবাজার জেলার চা শ্রমিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
এ সময় মজুরি বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চা শ্রমিকরা। পাশাপাশি তাদের নানা সুবিধা-অসুবিধার কথা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন, মৃত্তিকা চা বাগানের শ্রমিক রিতা পানিকা ও মাধবপুর চা বাগানের শ্রমিক সোনামনি রাজশ্রী। তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের ভূমির অধিকার নিশ্চিতকরণ, মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস করা, উন্নত চিকিৎসার জন্য এমবিবিএস ডাক্তার নিয়োগ ও অ্যাম্বুলেন্স প্রদান এবং প্রতিটি বাগানের বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করার দাবি জানান এবং প্রধানমন্ত্রীকে চা বাগানে এসে তাদের হাতে এক কাপ চা খাবার দাওয়াত দেন।
প্রধানমন্ত্রী তাদের সব দাবি-দাওয়া পূরণের আশ্বাস দিয়ে হাত উচু করে বালা দেখিয়ে বলেন, গণভবনে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসে এটি উপহার দিয়েছিলেন আপনারা। সেই উপহার এখনও আমি হাতে পরে বসে আছি, আমার কাছে এটা হচ্ছে সব থেকে অমূল্য সম্পদ। দেশের অন্য নাগরিকরা যে অধিকার পান চা শ্রমিকরাও তা পাবেন। তিনি চা বাগান মালিকদেরকে শ্রমিকদের প্রতি আর যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
সভায় প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ভ্যালি নেতা ও চা বাগানের সব পঞ্চায়েত এবং মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস শহীদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, জেলা পরিষদ প্রশাসক মিছবাহুর রহমান, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
পাত্রখোলা চা বাগানের পাশাপাশি জেলার আরও ২১টি নির্ধারিত জায়গায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে অন্যান্য উপজেলার শ্রমিকরাও প্রধানমন্ত্রীর এই ভিডিও কনফারেন্স দেখতে পান।
মতবিনিময় শেষে চা শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে কাঠি নৃত্যপ্রদর্শন করেন, যা দেখে তিনি মুগ্ধ হন এবং প্রশংসা করেন।
উল্লেখ্য, মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে টানা ১৯ দিন আন্দোলনের পর গত ২৮ আগস্ট চা-বাগানে কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। তার আগে ২৭ আগস্ট রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাগান মালিকদের সঙ্গে বসে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করে দেন। তবে চা-শ্রমিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ এ ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়।