মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা থেকে নতুন উগ্রপন্থী সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ দেশে জঙ্গি তৎপরতা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল; কিন্তু তা ব্যর্থ করে দিয়েছে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম-সিটিটিসি। মাত্র ৪ ঘণ্টার অভিযানে ১০ জঙ্গিকে গ্রেফতারও করেছে। অভিযান শেষে শনিবার (১২ আগস্ট) সকালে সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ঘটনাস্থলে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
আটক ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ সদস্যরা সাতক্ষীরা, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর ও বগুড়া থেকে কুলাউড়ায় আসে। গ্রেফতারকৃতরা হলো, সাতক্ষীরা উপজেলার নলতার ওমর আলীর ছেলে শরীফুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৪০), তাদের মেয়ে হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০), কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার কালনার আবুল কাশেমের ছেলে হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলার রসুলপুরের নজরুল ইসলামের ছেলে খায়রুল ইসলাম (২২), তার স্ত্রী মেঘনা (১৮), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার মাইজবাড়ীর সাইফুল ইসলামের ছেলে রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনার আটঘরিয়ার শ্রীপুরের আব্দুস ছাত্তারের স্ত্রী শাপলা বেগম (২২), নাটোরের চাঁদপুরের সোহেল তানজীম রানার স্ত্রী মাইশা ইসলাম (২০) ও বগুড়ার সারিয়াকান্দির নিজবলাইর সুমন মিয়ার স্ত্রী সানজিদা খাতুন (১৮)।
সিটিটিসি প্রধান জানান, কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি এলাকার গহীন পাহাড়ে নতুন এই উগ্রবাদী সংগঠনটি ৫০ শতক জমি ক্রয় করে বাড়ি বানিয়ে আস্তানা গড়ে তোলে। তারা এখানে সমবেত হয়ে প্রশিক্ষণ সামগ্রী, বিস্ফোরক দ্রব্য ইত্যাদি সংগ্রহ করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে চেয়েছিল। এ তথ্য জানতে পেরে ঢাকায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ‘সোয়াত’ টিমের গোয়েন্দা দল গত সাত দিনে তাদের এই আস্তানা নিশ্চিত করে। পরে জেলা ও কুলাউড়া থানা পুলিশের সহযোগিতায় শুক্রবার রাত থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখা হয়। শনিবার ভোরে ‘সোয়াত’ টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে বিনা বাধায় ছয় মহিলা ও চার পুরুষসহ ১০ জনকে আটক করেন। এ সময় জঙ্গিদের সঙ্গে তিন শিশুও ছিল। তাদেরকে হেফাজতে নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে জঙ্গি আস্তানায় ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে প্রায় ৩ কেজি বিস্ফোরক ও গ্রেনেডসহ হাই এক্সপ্লোসিভ তৈরির উপাদান ৫০টির মতো ডেটোনেটর, নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, কয়েক বস্তা জিহাদি বই, বক্সিং ব্যাগ, বিপুল পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য ও প্রশিক্ষণ সামগ্রী জব্দ করা হয়।
সিটিটিসি প্রধান আর জানান, তারা এই জঙ্গি সংগঠনের মূল ব্যক্তির নাম পেয়েছেন। আশা করছেন সে পর্যন্ত পৌঁছতে সক্ষম হবেন। পরে ‘সোয়াত’ টিমের বোমা নিস্ক্রিয়করণ দলের সদস্যরা কর্মধা আসকরাবাদ ফুটবল মাঠে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক ধ্বংস করেন।
কুলাউড়ার এই গহীন পাহাড়ি এলাকায় মাসখানেক আগে ৩০ থেকে ৩৫ জনের একটি জঙ্গি দল এখানে বসতি স্থাপন করে। সেখানের টাট্টিউলি বাজারের চা দোকানদার শফিক মিয়া জানান, ওই বাড়ির বাসিন্দারা প্রায় মাসখানেক আগে এখানে এসে নতুন বাড়ি করেছেন। তার দোকানে এসে অল্প বয়সের দুই পুরুষ নিয়মিত চা খেতেন। তারা বলেছিল, তাদের বাড়ি বগুড়ায়। নদী ভাঙনে তাদের বাড়ি চলে গেছে, তাই এখানে এসে বসতি করেছেন। আরও পরিবার আসবে।