না ফেরার দেশে চলে গেলেন ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু । একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী প্রথম ছাত্রী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন ভাষাসংগ্রামী এই নারী। মঙ্গলবার ভোর রাতে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। রওশন আরা বাচ্চুর মেয়ে তাহমিদা খাতুন জানান, তাঁর মা বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।
মঙ্গলবার বিকেলে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রওশন আরা বাচ্চুর মরদেহ বাংলা একাডেমিতে নিয়ে আসা হয়। তাঁর কাফনে মোড়ানো নিথর দেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান অনুরাগী, সহযোদ্ধা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, এরপড় সেখান থেকে তাঁর মরদেহবাহী গাড়ি বেরিয়ে যায় জন্মস্থান মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার উদ্দেশে।
বুধবার সকালে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার উছলাপাড়া গ্রামে তাঁর নিজ বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে ভাষার জন্য সংগ্রাম করা মহীয়সী নারী রওশন আরা বাচ্চুকে।
ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু। ফাইল ছবি
ভাষাসৈনিক রওশন আরা বাচ্চু ১৯৩২ সালের ১৭ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার উছলাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা এ এম আরেফ আলী, মা মনিরুন্নেসা খাতুন।
পিরোজপুর গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে অনার্স ও পরে ইতিহাসে এমএ পাস করেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতেই রওশন আরা গণতান্ত্রিক প্রোগ্রেসিভ ফ্রন্টে যোগ দিয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র রাজনীতিতে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এবং উইম্যান স্টুডেন্টস রেসিডেন্সের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
একুশে ফেব্রুয়ারিতে যে ছাত্রনেতারা ১৪৪ ধারা ভাঙতে চেয়েছিলেন তিনি ছিলেন তাদের অন্যতম। সেদিন তার নেতৃত্বেই ইডেন মহিলা কলেজ এবং বাংলাবাজার বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমাবেশস্থলে সমবেত হয়।
সমাবেশস্থলের বাইরে তখন পুলিশ ব্যারিকেড দিয়েছে। আরও কয়েকজন ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে রওশন আরা বাচ্চু সেই ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন এবং দলের অন্যদের নিয়ে বেরিয়ে যান। পুলিশ এলোপাথাড়ি লাঠিপেটা শুরু করলে আহত হন দুজন, তাদের একজন রওশন আরা।
ঢাকার আনন্দময়ী স্কুল, লিটল অ্যাঞ্জেলস, আজিমপুর গার্লস স্কুল, নজরুল একাডেমি, কাকলি হাই স্কুলে তিনি শিক্ষকতা করেছেন দীর্ঘ দিন। সবশেষে ২০০০ সালে বিএড কলেজের অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান সংগ্রামী এই নারী।