ডিজিটাল বিপ্লবের হাত ধরে বাংলাদেশে অনলাইনে বেচাকেনা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এর ফলে মানুষ ঘরে বসেই সময় বাঁচিয়ে হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছে তার পছন্দসই পণ্য। তাই করোনা ভাইরাসের এই সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে এখন অনেকেই ঝুঁকছেন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। বিশেষজ্ঞরাও স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয়ের পরামর্শ দিচ্ছেন।
এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী উচ্চ সংক্রমণের হার বিদ্যমান থাকায় আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাটে গিয়ে কোরবানির পশু কেনা নিয়ে সাধারনের মাঝে তৈরি হয়েছিল নানা সংশয়। এমন পরিস্থিতিতে কোরবানীর হাটে ভীড় লাঘবে এবং জনগণের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের উদ্যোগে এ জেলায় চালু হলো অনলাইন পশুর হাট ‘smart হাট’। যেখানে ঘরে বসেই পাওয়া যাবে পছন্দের পশুটি।
গতকাল জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে স্মার্ট হাটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এর উদ্বোধন করেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো: খলিলুর রহমান। এ সময় মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মেহেদি হাসানের সঞ্চালনায় সংযুক্ত ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপপরিচাল মল্লিকা দে, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুস সামাদ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের প্রোগ্রামার ইঞ্জিনিয়ার আবু কাওসার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকতৃাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও উদ্যোক্তাগন।
গত বছর প্রথমবারের মত মীর নাহিদ আহসানের উদ্যোগে অনলাইন পশুর হাট ‘smart হাট’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে এ জেলায় পশু কেনাবেচা কার্যক্রম শুরু হয়েছিলো। এবার তা চালু হয়েছে ওয়েবসাইটভিত্তিক। একজন ক্রেতা ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বিভিন্ন ক্যাটাগরির পশু হতে তার পছন্দের পশু পছন্দ করে ওয়য়েবসাইটের এডমিনদের মাধ্যমে বিক্রেতার সাথে সংযোগ করতে পারবেন। গতবারের মতো এবারও থাকছে উপজেলা ভিত্তিক হটলাইন নাম্বার যার মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতা যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারবেন।
‘smart হাট’ কি: স্মার্ট হাট মূলত ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আনলাইনে পশু বেচাকেনার একটি অনলাইন নির্ভর বাজার। যেখানে ক্রেতা এবং বিক্রেতাকে একত্রিত করা হয়। এখানে ক্রেতা যেমন ভাবে উপকৃত হন ঠিক তেমনভাবেই উপকৃত হন বিক্রেতাও। এটি ওয়েবসাইটভিত্তিক অনলাইন হাট বাজার। গত বছর ফেইসবুক পেইজের মাধ্যমে প্রথমবার শুরু হলেও এই বাজারটি বেশ জমে উঠেছিলো, করোনার মহামারিতে গতবছর প্রায় ৫০ জন খামারী এর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, যাদের ১০০০টি কোরবানীর পশু অনলাইনে কেনা-বেঁচা হয়। যার ফলে কোরবানীর পশুর হাটের ভীড় কিছুটা হলেও লাঘব করা যায় এবং প্রান্তিক খামারীরাও উপকৃত হন।
‘smart হাট’ এর বৈশিষ্ট্য: অন্যান্য ই-কমার্স সাইটের মতোই এটি কাজ করে, বিক্রেতারা www.smarthaat.org ওয়েবসাইটে পশুর ছবি ও বিস্তারিত তথ্য দিবেন, আর ক্রেতারা সেটা দেখে তাদের পছন্দ অনুযায়ি পশু কিনতে পারবেন। এক্ষেত্রে অন্যতম সুবিধা হলো, ২৪ ঘন্টাই এখানে ফার্ম ও বিক্রেতার কাছ থেকে পশু কেনা যাবে এছাড়া সহজেই পণ্য খুঁজে পাওয়া, অর্ডার ট্র্যাকিং করা, এবং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রয়েছে স্বচ্ছতা ও মনিটরিং ব্যবস্থা। ২০% অনলাইন প্যামেন্ট ও ৮০% ক্যাশ অন ডেলিভারির ব্যবস্থাও রয়েছে। আর মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে যেকোন জায়গা থেকে প্যণ্যটি মনিটরিং করতে পাড়বেন ক্রেতা-বিক্রেতা।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগ : জেলা প্রশাসনের সাথে এ উদ্যোগে সহযোগিতায় আছে জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, মৌলভীবাজার। স্মার্ট হাট ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যে ৫০ জন খামারীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে এবং ২০০টির পশুর বর্ণনা আপলোড করা হয়েছে। পশুর বর্ণনার সাথে রয়েছে খামারিদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, ভিডিও, স্থির ছবি, গরুর ক্ষেত্রে দাঁতের সংখ্যা, ওজন, মূল্যসহ বিস্তারিত। এ উদ্যোগের ফলে প্রান্তিক খামারীরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের পশুর তথ্য এই ওয়েবসাইটে আপলোড করতে পাড়ছেন।
জেলায় সীমিত আকারে কোরবানীর হাট বসায় প্রান্তিক খামারীদের মধ্যে পশু বিক্রয়ের যে দুশ্চিন্তা ছিলো, স্মার্ট হাটের মাধ্যমে তা লাঘব হয়েছে, পাশাপাশি করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়িয়ে নিরাপদ হবে পশু ক্রয়-বিক্রয় বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন।